Dr. Mushtaque Ahmad

কুরবানি বিষয়ক ফতোয়া (ফিকহী বিধান)

ইসলামে কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা কেবল কুরবানির দিনগুলোতেই আদায় করা যায়। এটি হজরত ইব্রাহিম (আঃ) ও হজরত ইসমাইল (আঃ)-এর ত্যাগের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আদায় করা হয়। নিচে কুরবানি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়াগুলো তুলে ধরা হলো:


🌙 কুরবানির বিধান

  1. ওয়াজিব হওয়া:
    • প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলিম, মুক্ত (দাস নয়), মুকীম (মুসাফির নয়) ব্যক্তি—যার কাছে কুরবানির দিনগুলোর কোনো এক দিন নিজের প্রয়োজনাতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তার ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব।
    • নিসাব: প্রায় ৭.৫ তোলা সোনা বা ৫২.৫ তোলা রুপার সমপরিমাণ সম্পদ (অথবা এ সমপরিমাণ অর্থ/মালিকানা)।
  2. কুরবানির সময়:
    • ঈদুল আজহার নামাজের পর থেকে শুরু হয়ে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত (মোট ৩ দিন) সময়।
    • শহরবাসীর জন্য ঈদের নামাজ না পড়ে কুরবানি করা জায়েজ নয়।
    • গ্রামাঞ্চলে, যেখানে ঈদের জামাত হয় না, সেখানে সকাল হওয়ার পর কুরবানি করা যাবে।

🐄 কোন কোন পশু কুরবানি করা যায়

  • গরু, মহিষ: ২ বছরের বেশি বয়সী; ৭ জন মিলে কুরবানি করা যায়।
  • উট: ৫ বছরের বেশি বয়সী; ৭ জন মিলে কুরবানি করা যায়।
  • ছাগল, ভেড়া, দুম্বা: ১ বছরের বেশি বয়সী (ছোট হলেও যদি বড় দেখে এক বছরের মতো মনে হয়, তাহলে চলবে) — একজনের পক্ষ থেকে কুরবানি করা যায়।

🚫 ত্রুটিযুক্ত পশু কুরবানি করা জায়েজ নয় যদি:

  • চোখ অন্ধ হয় বা খুবই দুর্বল হয়
  • খুবই অসুস্থ
  • পা ভাঙা বা দাঁড়াতে পারে না
  • খুব দুর্বল/হাড্ডিসার

🍖 কুরবানির মাংস বণ্টনের নিয়ম:

  1. ওয়াজিব কুরবানি করলে — মাংস তিন ভাগ করা উত্তম:
    • ১/৩ – আত্মীয়/গরীব
    • ১/৩ – আত্মীয়স্বজন/বন্ধুবান্ধব
    • ১/৩ – নিজের জন্য
  2. নফল কুরবানি করলে পুরো মাংস নিজে খাওয়া, পরিবারে রাখা, দান করা—সবই বৈধ।

💰 মূল্য দিয়ে কুরবানির বিকল্প?

  • গরিবদের টাকা দিয়ে কুরবানির বিকল্প আদায় করা জায়েজ নয়। কুরবানি একটি স্বতন্ত্র ইবাদত, এটি পশু জবাইয়ের মাধ্যমেই আদায় হয়।

কিছু সাধারণ প্রশ্নের ফতোয়া

  • নারী কি কুরবানি করতে পারে?
    হ্যাঁ, যদি তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয়।
  • কুরবানির পশু জবাই করা কি নিজ হাতে করতে হবে?
    না, তবে উপস্থিত থাকা এবং তাকবির বলা উত্তম।
  • কোনো কারণে কুরবানি করা না গেলে?
    ইচ্ছাকৃতভাবে না করলে গুনাহ হবে। অজুহাতবশত না করতে পারলে পরে একটি পশু সদকা করা উত্তম (বিশেষত হানাফি মতে)।

ইসলামী ফতোয়ার উৎস হিসেবে আপনি চাইলে দারুল উলুম দেওবন্দ, ইসলামী ফিকহ একাডেমি, অথবা বাংলাদেশ ইসলামী ফিকাহ বোর্ড এর ওয়েবসাইটেও দেখতে পারেন।

আপনি চাইলে কুরবানির নিয়ত, দোয়া, অথবা ফিকহী মতানৈক্য সংক্রান্ত দিক নিয়েও জানতে পারেন। বিস্তারিত দরকার হলে জানান।

হযরতের আরও লিখা

খানকায় কেন মাল খরচ করা প্রয়োজন

খানকা (সুফি ধর্মের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র) পরিচালনায় মাল খরচ বা আর্থিক ব্যয় প্রয়োজনীয় হওয়ার পেছনে ধর্মীয়, সামাজিক ও ব্যবহারিক বেশ কিছু কারণ রয়েছে। ইসলামী সুফিবাদে খানকাগুলো

Read more >

খনিকের জীবন

খনিক, বা ক্ষণিক, হলো বাংলা সাহিত্যে একটি বিশেষ ধরনের কবিতা বা গদ্য রচনা, যা মুহূর্তের অনুভূতি, চিন্তা বা দৃশ্যকে সংক্ষিপ্ত yet গভীরভাবে প্রকাশ করে। এই

Read more >

more insights

খানকায় কেন মাল খরচ করা প্রয়োজন

খানকা (সুফি ধর্মের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র) পরিচালনায় মাল খরচ বা আর্থিক ব্যয় প্রয়োজনীয় হওয়ার পেছনে ধর্মীয়, সামাজিক ও ব্যবহারিক বেশ কিছু কারণ রয়েছে। ইসলামী সুফিবাদে খানকাগুলো

Read more >

খনিকের জীবন

খনিক, বা ক্ষণিক, হলো বাংলা সাহিত্যে একটি বিশেষ ধরনের কবিতা বা গদ্য রচনা, যা মুহূর্তের অনুভূতি, চিন্তা বা দৃশ্যকে সংক্ষিপ্ত yet গভীরভাবে প্রকাশ করে। এই

Read more >