Dr. Mushtaque Ahmad

খানকায় কেন মাল খরচ করা প্রয়োজন

খানকা (সুফি ধর্মের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র) পরিচালনায় মাল খরচ বা আর্থিক ব্যয় প্রয়োজনীয় হওয়ার পেছনে ধর্মীয়, সামাজিক ও ব্যবহারিক বেশ কিছু কারণ রয়েছে। ইসলামী সুফিবাদে খানকাগুলো শুধু আধ্যাত্মিক চর্চার স্থান নয়, বরং সমাজসেবা ও সম্প্রদায়ের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিচে এর প্রধান কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হলো:


১. আতিথেয়তা ও সেবা (ضيافة)

সুফি খানকাগুলোতে সর্বদা ভ্রমণকারী দরবেশ, ফকির ও সাধকদের জন্য খাবার, থাকার ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়া হয়। এই ঐতিহ্য ইসলামের “মেহমানদারি” (আতিথেয়তা) নীতির উপর ভিত্তি করে। রাসূল (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে, সে যেন মেহমানের সম্মান করে।” (বুখারি)
এ কারণে খানকার রোজকার খরচে রান্না, আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা বাধ্যতামূলক।


২. গরিব ও যাত্রীদের সাহায্য

অনেক খানকা গরিব, অসহায় ও পথিকদের জন্য মুক্ত খাবার (লঙ্গর) বা আর্থিক সহায়তা দেয়। সুফি সাধকরা বিশ্বাস করেন, সম্পদ বণ্টন করলে আল্লাহর রহমত বৃদ্ধি পায়। যেমন:

  • দাতব্য চাল-ডাল, কাপড় বা ঔষধ বিতরণ।
  • মুসাফিরখানা বা হাসপাতাল পরিচালনা (ঐতিহাসিকভাবে অনেক খানকায় চিকিৎসাসেবা ছিল)।

৩. ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও শিক্ষা

খানকায় নিয়মিত জিকির-আজকার, সম্মেলন, ওরশ (সুফি সাধকের মৃত্যুবার্ষিকী) ইত্যাদি আয়োজনে অর্থ ব্যয় হয়। এছাড়া:

  • কুরআন, হাদিস ও সুফি সাহিত্য শিক্ষার ব্যবস্থা।
  • বই, মাদ্রাসা বা লাইব্রেরি রক্ষণাবেক্ষণ।

৪. স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণ

খানকার ভবন, মসজিদ, সমাধি বা প্রার্থনা কক্ষের মেরামত, বিদ্যুৎ-পানি বিল ইত্যাদি নিয়মিত খরচ প্রয়োজন। কিছু ঐতিহাসিক খানকা (যেমন: বাংলাদেশের শাহজালাল (রহ.)-এর দরগাহ) পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত, যেখানে নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে বিনিয়োগ করতে হয়।


৫. সুফি ঐতিহ্য ও শৃঙ্খলা

সুফি তরিকার (যেমন: কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া) নির্দেশনা অনুযায়ী, মুরিদান (শিষ্য) ও পীর-মাশায়েখদের ভরণপোষণ খানকার দায়িত্ব। ইসলামে “ফি সাবিলিল্লাহ” (আল্লাহর পথে ব্যয়) এর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে:
“তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো… আর যা কিছু ভালো কাজ আগে পাঠিয়ে দেবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে।” (সুরা বাকারা, ২:১১০)


৬. স্বনির্ভরতা ও ওয়াকফ

অনেক খানকা ওয়াকফ সম্পত্তি (ধর্মীয় ট্রাস্ট) থেকে আয় করে, যা জমি, দোকান বা কৃষিজমির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তবে এসব সম্পত্তি রক্ষা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ প্রয়োজন।


সতর্কতা: অপচয় নয়, ভারসাম্য

ইসলামে অপচয় (ইসরাফ) নিষিদ্ধ। তাই খানকার অর্থ ব্যয়ে সততা ও জবাবদিহিতা জরুরি। সুফিরা বিশ্বাস করেন, সম্পদ হলো আমানত, যা সমাজের সেবায় ব্যবহার করতে হবে।


উপসংহার

খানকায় মাল খরচের মূল উদ্দেশ্য হলো আধ্যাত্মিকতা ও সমাজসেবার সমন্বয় করা। এটি শুধু আচার-অনুষ্ঠান নয়, বরং ইসলামের “ইহসান” (সদাচরণ) ও “ইত্তেবায়ে সুন্নাহ” (সুন্নতের অনুসরণ) এর প্রতিফলন। যেমন হযরত আবু বকর (রা.) বলতেন:
“আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ব্যয় করো, তবে জেনেশুনে করো।”

হযরতের আরও লিখা

কুরবানি

কুরবানি বিষয়ক ফতোয়া (ফিকহী বিধান) ইসলামে কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা কেবল কুরবানির দিনগুলোতেই আদায় করা যায়। এটি হজরত ইব্রাহিম (আঃ) ও হজরত ইসমাইল (আঃ)-এর

Read more >

খনিকের জীবন

খনিক, বা ক্ষণিক, হলো বাংলা সাহিত্যে একটি বিশেষ ধরনের কবিতা বা গদ্য রচনা, যা মুহূর্তের অনুভূতি, চিন্তা বা দৃশ্যকে সংক্ষিপ্ত yet গভীরভাবে প্রকাশ করে। এই

Read more >

খানকায় কেন মাল খরচ করা প্রয়োজন

more insights

কুরবানি

কুরবানি বিষয়ক ফতোয়া (ফিকহী বিধান) ইসলামে কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা কেবল কুরবানির দিনগুলোতেই আদায় করা যায়। এটি হজরত ইব্রাহিম (আঃ) ও হজরত ইসমাইল (আঃ)-এর

Read more >

খনিকের জীবন

খনিক, বা ক্ষণিক, হলো বাংলা সাহিত্যে একটি বিশেষ ধরনের কবিতা বা গদ্য রচনা, যা মুহূর্তের অনুভূতি, চিন্তা বা দৃশ্যকে সংক্ষিপ্ত yet গভীরভাবে প্রকাশ করে। এই

Read more >